যশোরের চৌগাছায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, বিগত দিনে প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবায় ১৩ বারের দেশসেরা একমাত্র মডেল হাসপাতালটি নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে ভরপুর হয়ে পড়েছে। হাসপাতালটি দীর্ঘদিন সুনামের সাথে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসলেও সেই সুনামের খাতে এখন লজ্জা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার হাসপাতালে যোগদানের পর থেকেই সেবার মান কমতে থাকে। বাড়তে থাকে ব্যয়ের খাত।
হাসপাতালে করোনাকালীন ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে হাসপাতালের ওই কর্মকর্তা উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে সম্প্রতি প্রায় ১০ লাখ টাকার বিল ভাউচার জমা দেন। বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের মাঝে জানাজানি হলে তিনি সেই বিল ভাউচার দ্রুত ফেরত নিয়ে যান। পরবর্তীতে তিনি ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার বিল ভাউচার জমা দিয়ে টাকা উত্তোলন করেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার বিল উত্তোলন করেছেন সেটি সঠিক নয়। তিনি যশোর আল মদিনা সার্জিক্যাল থেকে গত ২৩ জুন ১৫৮৩ নম্বর ভাউচারে স্টেরিল গ্লাভস ২০০ পিস ৭০ টাকা দরে ১৪ হাজার টাকা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ৩০ পিস ২৫০ এমএল ২০০ টাকা দরে ৬ হাজার টাকা, ১৫৮৫ নম্বর ভাউচারে স্টেরিল গ্লাভস ২৮৫ পিম ১৯ হাজার ৯৫০ টাকা, ১৫৮৪ নম্বর ভাউচারে স্টেরিল গ্লাভস ২৫০ পিস ১৭ হাজার ৫০০ টাকা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ১২ পিস ২৫০ এমএল ২ হাজার ৪০০ টাকা, যশোর একতা স্টোর থেকে ৯০ কেজি ব্লিচিং পাউডার ১০ হাজার ৫০০ টাকা ও হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ২০ দিনের দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা হারে ১০ হাজার টাকা প্রদান করে সর্বমোট ৮০ হাজার ৩৫০ টাকার বিল ভাউচার দেন। একদিনেই এক দোকান থেকে তিনটি ভাউচারে সর্বমোট ৫৯ হাজার ৮৫০ টাকার স্টেরিল গ্লাভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বিল ভাউচার করায় সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে একদিনেই এক দোকান থেকে তিনটি ভাউচারে সর্বমোট ৫৯ হাজার ৮৫০ টাকার স্টেরিল গ্লাভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ক্রয়ের বিষয়ে আল মদিনা সার্জিক্যালের নম্বরে যোগাযোগ করা হলে কর্মরত কর্মচারি গাজী আলম জানান, বিষয়টি আমাদের জানা নেই।
হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারি জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের করোনায় সুরক্ষার জন্য কোনো সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেন না। আর বাকি ৫৯ হাজার ৬৫০ টাকার কোনো হিসাব দেখাতে পারেননি ওই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।
এছাড়া ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে তিনি মোটরসাইকেলের তেলের প্রায় লাখ টাকা আত্তসাৎ করেছেন বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। অথচ ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত তিনি ২৭০ লিটার জ্বালানি পেট্রোল উত্তোলন করেছেন, যার মূল্য ২৩ হাজার ২৭৪ টাকা, মোটরসাইকেলের মবিল উত্তোলন করেছেন ৫ লিটার যার বিল ভাউচার ২ হাজার ২৫০ টাকা। এছাড়া মোটরসাইকেল মেরামত ব্যয় দেখিয়ে সোহেল মোটরসাইকেল সার্ভিসিং সেন্টারের বিল ভাউচারে ৮ হাজার ৮৭০ টাকার বিল উত্তোলন করেছেন।
অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহারের কাছে জানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে ১০ লাখ টাকার করোনা বিল হিসাবরক্ষণ অফিসে জমাদানের বিষয়ে তিনি বলেন, বিলটি জমাদানের সময় ভুল ছিল পরে ভুল সংশোধন করা হয়েছে। #