নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় মাঠে মাঠে এখন পাট কাটা, জাগ দেয়া, আশ ছুড়ানো এবং শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার চাষীরা। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে পাট বেচাকেনা হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন হাট-বাজারে মানভেদে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২৫০০টাকা থেকে ৩০০০ টাকায়।
নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় গত ২০২০ সালে পাটের মোট উৎপাদন ছিলো ১১৬৫ হেক্টর আর ফলন হয়েছিলো ২৫৭৫ মেট্রিকটন।
এবার গতবারের তুলনায় এবার ২০২১সালে বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলায় মোট ১৮১০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে তার মধ্যে ১৬৮০ হেক্টর জমির পাট কাটা হয়েছে এবং এবছরের মোট উৎপাদনের ফলন হয়েছে ৪০৩২ মেট্রিকটন।
পাট চাষে এবারে আবহাওয়া মোটামুটি অনুকূলে থাকায় এবার পাটের বাম্পার ফল হয়েছে।
বর্তমানে পাট কাটা, জাগ দেয়া, আঁশ ছুড়ানো এবং শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় চাষীরা। উপজেলার নলডাঙ্গা হাটে নতুন পাটের বেচা কেনা বেশ কিছু দিন আগে থেকেই শুরু হয়।
শনিবার (২১ই আগষ্ট) উপজেলার নলডাঙ্গা হাটে পাট বিক্রি করতে আসা বেশ কজন কৃষকের সাথে সাক্ষাত শেষে তারা জানান ,”পাট চাষ করতে লাঙ্গল, বীজ সেচ, কাটা, পরিস্কার করা, সারসহ যাবতীয় খরচ খরচের তুলনায় এবার তাদের গুনতে হচ্ছে লোকসান।
৫০০টাকা দিন মজুরী দিয়েও তারা কাজে কামলা (শ্রমিক) পাচ্ছে না! যার ফলে পাটের আশ ছুড়ানোতে তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে!
এবং পানিতে জাগ দেওয়া পাট সময়মত আশ ছোড়ানো না গেলে পাটের আঁশ পঁচে যাওয়ার আংশকা রয়েছে।
এদিকে ঠাকুরলক্ষীকোল বিলে কয়েকজন পাট চাষীর সাথে সাক্ষাত কালে তারা বলেন, এবার যদিও পাটের দাম মোটামুটি ভালোই রয়েছে কিন্তু যেহারে কামলা(শ্রমিক) ও সব কিছুর খরচ বেড়ে চলেছে তাতে গতবারের মত এবারও পাট চাষ করে লোকসান গুণতে হচ্ছে।
বর্তমান বাজারে মানভেদে প্রতি মণ পাটের দাম দুই হাজার পাঁচশত টাকা থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে গ্রামে পাট কিনতে আসা পাটের ফড়িয়ারা বলেন, গতবারের তুলনায় এবার পাটের চাহিদা মোটামুটি ভালো এবং দামও ভালোই আছে,
তাই তারা হাটের পাশাপাশি অল্প কিছু টাকা মন প্রতি কমে, কৃষকদের সুবিধার্থে এলাকায় ঘুরে ঘুরেও পাট কিনছেন!
এতে করে কৃষকের সময়ের অপচয় কম হচ্ছে!
পাশাপাশি ঐ সময়টুকু অন্য কাজে ব্যয় করতে পারছেন।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও পাটচাষী দেওয়ান শাহজাল বলেন, “সরকারিভাবে খাদ্য বিভাগ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান পাটের ব্যাগ ব্যবহার করে না। যদি সার কারখানা, চিনিকল, সিমেন্ট কারখানা, চাল ও আটাসহ বেশিরভাগ কারখানার পণ্য সরবরাহ করা হলে পাটের দাম বাড়ত বলে মনে করেন তিনি। আবার বিভিন্ন পণ্যের মোড়কের জন্য দেশের বিপুল অর্থ বিদেশে যেত না। বেঁচে যেত দেশীয় পাট শিল্প।”
উপজেলার সেনভাগ গ্রামের শ্রমিক সিরাজুল ইসলাম হিরা বলেন, “গড়ে দিনে ২৫ বস্তা পাটের আঁশ ছোড়ালে ৫০০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন পাটের প্রকার ভেদে ২৫-৩৫ বস্তা পাটের আঁশ ছোড়ানো যায়।”
এদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন,
“আমরা পাট চাষিদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। কৃষক পাট চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে এবং পাটের ন্যায্য মূল্যও পাচ্ছে। আমরা পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।
বর্তমানে পাট থেকে ১৩১ ধরনের পাটপণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে এবং বিদেশে এই পণ্যগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
এদিকে পলিথিন ব্যবহারের পরিবর্তে সর্বক্ষেত্রে পাটের ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে। এতে আমাদের পরিবেশ রক্ষা পারে, পাশাপাশি পাটের হারানো ঐতিহ্য, গৌরব ফিরে আসবে।
Like this:
Like Loading...
Related